রবিবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২১ অপরাহ্ন

বুয়েটে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে

বুয়েটে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে

স্বদেশ ডেস্ক:

শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকা-ের পর থেকে নানা সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। শিক্ষার্থীরা মাঠের আন্দোলন প্রত্যাহার করলেও এখনো ক্লাস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন না। এ অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে সেশনজটে পড়তে পারেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বুয়েট শিক্ষক সমিতিও অটল।

গতকাল মঙ্গলবার বুয়েট ক্যাম্পাসে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক কাজ চললেও খণ্ড খণ্ড হয়ে শিক্ষার্থীরা করিডরে বসে আছেন। এ সময় কোনো শিক্ষার্থী ক্লাস বা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। তারা বলছেন, আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্র দাখিল ও সেখানে অভিযুক্তদের বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষার মতো একাডেমিক কার্যক্রমগুলোয় অংশ নেবেন না। তবে এ দাবিতে বুয়েটের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করবেন না। যদিও বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে, একাডেমিক ভবনগুলোর তালা খোলা রাখা হয়েছে।

এদিকে নিজেদের দেওয়া ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে গতকাল বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংবাদ সম্মেলন করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা বলেন, মাঠপর্যায়ের কর্মসূচি তুলে নেওয়ার ১৩তম দিন আজ। আমরা চাই প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে বুয়েটের কল্যাণের নিমিত্তে আমাদের দাবিগুলো সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করবে। আমরা চাই না প্রশাসনে থাকা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা পারস্পরিক দোষারোপ করে কাজের গতি স্থবির করে দিক। প্রশাসন সদিচ্ছা পোষণ করলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এখনো রয়ে গেছে। এরই মধ্যে অনেক সময় গড়িয়ে গেছে, প্রশাসন তৎপর হলে এ সময়ের মধ্যে আরও অনেক অগ্রগতি করতে পারত। প্রয়োজনে আমরা সব সাধারণ শিক্ষার্থী ভিসি স্যারের সঙ্গে আবারও আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। প্রশাসন তৎপর না হলে আমরা কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হব। এ সময় দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী। এরপর ফাহাদ হত্যার বিচারসহ বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের মুখে ১১ অক্টোবর বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। শিক্ষার্থীরা তাদের সব দাবির বাস্তবায়নে দৃশ্যমান পদক্ষেপ ও দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য কয়েকটি দাবি পূরণের শর্তে ১৪ অক্টোবর ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে আন্দোলন শিথিল করেন। পরে সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে ১৬ অক্টোবর বুয়েট মিলনায়তনে গণশপথের মধ্য দিয়ে মাঠের আন্দোলনে ইতি টানেন শিক্ষার্থীরা। তবে মামলার অভিযোগপত্র এলে সে অনুযায়ী অভিযুক্তদের বহিষ্কার না করা পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করার ঘোষণা দেন তারা।

জানা গেছে, ১৯ অক্টোবর বুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে এসব পরীক্ষা নিতে নতুন সময়সূচি ঘোষণা করার কথা ভাবছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে অন্য দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। একাডেমিক কাউন্সিল শিগগিরই পরীক্ষার নতুন তারিখ নির্ধারণ করবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে আনতে তাদের সঙ্গেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি।

এর মধ্যেই উপাচার্য সাইফুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে অটল রয়েছে শিক্ষক সমিতি। তারা বলছেন, উপাচার্যের অপসারণের জন্য তাদের পক্ষ থেকে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক একেএম মাসুদ বলেন, উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরা অটল। আমরা অদক্ষ ও অযোগ্য ব্যক্তির অধীনে থাকতে চাই না। তার (ভিসির) কারণে বুয়েটের সার্বিক পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠছে। ইতোমধ্যে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ শুরু হয়েছে। এ ছাড়া উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে আমরা তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছি, যদিও তিনি পদত্যাগের ইচ্ছা পোষণ করেননি। এ বিষয়ে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত শিক্ষকরা ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে একাধিকবার উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877